কলকাতার হাজরা রোড এখন শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি হয়ে উঠছে ইতিহাস ও প্রকৃতির মেলবন্ধন। হাজরা মোড় থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে পলাশ গাছের সারি সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ইচ্ছা এবং একটি ঐতিহাসিক দিনের স্মৃতি।
পলাশ গাছের মাধ্যমে স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা
আগামী জুন-জুলাই মাসে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ হাজরা মোড়ের যতীন দাস পার্ক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত হাজরা রোডের দু’পাশে মোট ১২০টি পলাশ গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে ১৯৯০ সালের ১৬ আগস্টের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
সেই দিন তদানীন্তন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে হাজরা মোড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। সেই সময় জনাকয়েক যুবক তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করে। গুরুতর আহত মমতা দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এই ঘটনাটি তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাইবার সেলের সদস্য এবং অপরাধ বিজ্ঞানী সৌবীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট দিনটি এ বছর থেকে ‘আত্মদর্শন দিবস’ হিসাবে পালন করা হবে।’’ এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই হাজরা রোডের দু’পাশে পলাশ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে গাছ রোপণ
সৌবীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই বিষয়টি নিয়ে গত এক বছর ধরে আলোচনা চলছিল। আগামী পরিবেশ দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে পলাশ গাছ রোপণ শুরু করা হবে। কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ আগস্ট ‘আত্মদর্শন দিবস’ উপলক্ষে একটি বড় আকারের পলাশ গাছ অন্য কোথাও থেকে তুলে এনে যতীন দাস পার্কে রোপণ করা হবে। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
হাজরা মোড়ে মমতার সম্মানে ফলক স্থাপনের পরিকল্পনা
হাজরা মোড়ে ইতিমধ্যেই ভারতের দুই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর মূর্তি রয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, এই দু’টি মূর্তির পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানে একটি ফলক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিবেশ ও স্মৃতির সমন্বয়
পলাশ গাছ শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এটি পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। পলাশ গাছের ফুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করে। কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন।